প্রথম ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বার্ষিক খানার আয়ের ৪.৩ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে ওয়াশ বাবদ।
বাংলাদেশের প্রথম ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান। |
‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’-এর বর্তমান প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘২০২০-এ, ওয়াশ-খাতের ব্যয় মোট জিডিপি’র ২.১৮ শতাংশ। বাংলাদেশে খানাপ্রতি গড় বার্ষিক ওয়াশ বাবদ ১১,৫৭৪ টাকা (পানি বাবদ ১,৫০২ টাকা; স্যানিটেশন বাবদ ১,৯৮৫ টাকা; এবং স্বাস্থ্যবিধি বাবদ ৮,০৮৭ টাকা) খরচ করে। যা তাদের বার্ষিক খানার আয়ের ৪.৩ শতাংশ। আয়ের পরিমাণ অনুসারে খানার ওয়াশ ব্যয়ের বিভাজন থেকে দেখা যায় যে, শহর ও পল্লি উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র এবং দরিদ্রতম আয়ের খানাসমূহ তাদের আয়ের বড় অংশ ওয়াশ-এ ব্যয় করে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) খাতের সামগ্রিক ব্যয়ের গতিপ্রকৃতি ট্র্যাকিং-এর উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস ২০২০’ প্রতিবেদন এর মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহনাজ আরেফিন, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, এবং মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মিজানুর রহমান। অতিথি হিসেবে যোগ দেন ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম এবং হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ। ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রণয়ন কার্যক্রমের ফোকাল পয়েন্ট ও উপপরিচালক, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, আলমগীর হোসেন ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন যে, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি ৬ অর্জনে সকলের জন্য নিরাপদ ও সাশ্রয়ী সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের প্রাপ্যতা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের অংশ হিসেবে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে তথ্য-প্রমাণভিত্তিক পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণের পাশাপাশি ওয়াশ খাতে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো নিয়মিতভাবে ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ হালনাগাদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
শাহনাজ আরেফিন, সচিব,পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তার বক্তব্যে তুলে ধরেন যে, বিবিএস, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এর কারিগরি সহযোগিতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ কর্তৃক প্রণীত ‘ট্র্যাকফিন’ গাইডলাইন অনুসরণ করে সফলতার সাথে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রণয়ন করেছে।
মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ- গুরুত্ব সহকারে ব্যক্ত করেন যে, এসডিজি ৬ অভীষ্ট অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য পানি ও স্যানিটেশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এ খাতে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যক্তিগত, সরকারি ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয়ের কোনো গতিপ্রকৃতি জানা না থাকায় সম্পদের সঠিক বণ্টন ও ব্যয় নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় ছিল।
ওয়াটারএইড-এর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন যে, ওয়াশ খাতের যথাযথ পরিকল্পনার বিভিন্ন চালেঞ্জ মোকাবিলায় ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস-এ খানাভিত্তিক ব্যক্তিগত ব্যয় নিরূপণের জন্য খানার ওয়াশ ব্যয় জরিপ পরিচালনা করে প্রাথমিক তথ্য নেয়ার পাশাপাশি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জরিপও চালানো হয়েছে। প্রাথমিক উপাত্তের সাথে সেকেন্ডারি উপাত্ত সমন্বয় করে সমন্বিত ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো প্রণীত বেঞ্চমার্ক উদ্যোগটি ওয়াশ ব্যয়ের গতিপ্রকৃতি চিহ্নিতকরণ ও এ খাতে অর্থায়নের অবস্থা ট্র্যাকিং করার মাধ্যমে তথ্যপ্রমাণভিত্তিক দূরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
হাসিন জাহান, কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ তার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে, ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস প্রণয়ন ও গ্রহণের মাধ্যমে সর্বজনীন ওয়াশ পরিষেবা নিশ্চিতে সরকার, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাসমূহের একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহজতর হবে।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ। এছাড়াও শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক এর পাশাপাশি অনুষ্ঠানের আয়োজক বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশ-এর কর্মকর্তাবৃন্দ।