মানব পাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় সংলাপ: ভুক্তভোগিদের অধিকার সমুন্নত রাখার আহবান

বিশ্ব জুড়ে মানব পাচার একটি সংগঠিত অপরাধ হিসেবে চলমান রয়েছে। "পাচারের শিকার সকলের পাশে থাকব, বাদ যাবেনা কেউ’।

 

মানব পাচারের বিরুদ্ধে জাতীয় সংলাপ
আদম পাচারের বিরুদ্ধে আয়োজিত জাতীয় সংলাপে বক্তব্য রাখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

মানুষকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো বিশ্ব মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত, এ অপরাধ ঠেকাতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। 

আজ ২ আগস্ট, ২০২৩ বিশ্ব মানব পাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় আয়োজিত জাতীয় এক সংলাপে এমন আহবান জানালেন বিশিষ্টজনরা। বাংলাদেশ ইউএন নেটওয়ার্ক অন মাইগ্রেশন-এর কাউন্টার ট্রাফিকিং ইন পারসনস টেকনিক্যাল ওয়ার্কিং গ্রুপ-এর সহায়তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে। 


আরো পড়ুন: বিরাম চাই: কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়?


মানব পাচারের শিকারদের অধিকার



আয়োজিত সংলাপের থিম ছিল "পাচারের শিকার সকলের পাশে থাকব, বাদ যাবেনা কেউ’। মানব পাচার মোকাবেলায় একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়। পাচারের  শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে প্রতিশ্রুতির কথাও আসে সংলাপে।

 

সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের উদ্ধার, প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনেরই যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি করতে হবে, যাতে কেউ পাচারের শিকার না হয়।

 

সংলাপের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বিপিএএ, সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বলেন, “এটি প্রতিরোধের জন্য জাতীয় কর্তৃপক্ষকে আরও দক্ষ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । একইসাথে মানুষ পাচার প্রতিরোধে সকলকে নিয়ে কাজ করছি । "


মানব পাচার



পররাষ্ট্র সচিব রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যক্তি পাচারসহ সংগঠিত অপরাধ দমনে বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং সমন্বিত পদক্ষেপের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবৈধ আদম ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্বলতা এবং মূল কারণগুলি মোকাবেলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থদের সুরক্ষা এবং তাদের কল্যাণের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।”


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ মন্তব্য করেন, 'অভিবাসন প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে এবং এই দেশের মানুষদের জন্য এটিকে সহজ, টেকসই এবং সময়োপযোগী করতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আরও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসহ ই-পাসপোর্ট চালু করেছি।”

 

আদম ব্যবসা



আরো পড়ুন: রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের পাওয়ার কত রাখব? ফ্রিজের বাটন পরিবর্তন করার নিয়ম


এই সমস্যাকে আরও গভীরে নিয়ে গেছে এবং অপরাধকে কর্তৃপক্ষের নজরে আসার সম্ভাবনা কমিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে করোনা মহামারী। ইউএনওডিসি গ্লোবাল রিপোর্ট অন ট্রাফিকিং ইন পারসন্স ২০২২ অনুসারে, ৪১ শতাংশ পাচারের শিকার ব্যক্তিরা নিজেরাই প্রাণ নিয়ে ফেরেন এবং নিজস্ব উদ্যোগে কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের পরিস্থিতি বলেন। এটি আরেকটি স্পষ্ট লক্ষণ যে, পাচার বিরোধী কর্যক্রম কম হচ্ছে। 

 

বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস বলেছেন, “মানবিক ও উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতার সাথে আমি সরকারকে উৎসাহিত করছি যাতে রোহিঙ্গাসহ পাচার থেকে বেঁচে যাওয়া সকল নাগরিকদের জাতীয় সুরক্ষা পরিষেবাগুলিতে যুক্ত করা হয়। একইসাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা তৈরি অব্যাহত রাখা যাতে, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের চিহ্নিত, রেফার এবং তদন্ত পরিচালনা করা যায়। সাথে সাথে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।"


ইউএনওডিসির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি মার্কো টেক্সেইরা বলেন, "ব্যক্তি পাচার সংক্রান্ত আমাদের রিপোর্ট বিশ্বব্যাপী শিকার সনাক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার এবং পাচারের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি করার তাগিদ জানানো হয়েছে। এই জঘন্য অপরাধের অবসান ঘটাতে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সহায়তা করতে এবং বিচারের জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।” 

 

মানব পাচার দিবস ২০২৩



বাংলাদেশে জাতিসংঘ অভিবাসন বিষয়ক নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী ও আইওএম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ফাতিমা নুসরাথ গাজ্জালি বলেন, “এসব ঘটনা ঘটানো গুরুতর অপরাধ। সংকটের সময়ে পাচারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। এটি আমরা ২০২০ সাল থেকে মহামারীর প্রেক্ষাপটে প্রত্যক্ষ করেছি। এটি মোকবেলায় আমাদের সচেতনতা কার্যক্রম দ্বিগুণ করতে হবে এবং পাচারের শিকার প্রত্যেকের জন্য সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।”

 

খায়রুল আলম, অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি), জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; মীর খায়রুল আলম, অতিরিক্ত সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; মনিরুল ইসলাম, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিশেষ শাখা, বাংলাদেশ পুলিশ; চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান; ঈশিতা রনি, উপসচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ; মাহদী হাসান, জাতীয় কর্মসূচি সমন্বয়কারী, ইউএনওডিসি; এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনালের চিফ অফ পার্টি মিস সুসান স্ট্যাম্পারও আলোচনায় অংশ নেন।

 

মানব পাচার প্রতিবেদন



ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং ইউএনওডিসি ও আইওএম-এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত ’গ্লো-এ্যাক্ট’ প্রকল্প; কোরিয়ার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-কোয়িকার অর্থায়নে পরিচালিত ও আইওএম দ্বারা বাস্তবায়িত "বাংলাদেশে এটি প্রতিরোধের জন্য বিস্তৃত কাউন্টার ট্রাফিকিং প্রোগ্রাম" প্রকল্প; ইউএসএআইডি দ্বারা অর্থায়ন করা এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা বাস্তবায়িত "ফাইট স্লেভারি অ্যান্ড ট্রাফিকিং ইন পার্সন (এফএসটিআইপি) অ্যাক্টিভিটি" প্রকল্প; ইউএনএইচসিআর; ব্র্যাক; এবং জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার সংলাপটি আয়োজনের জন্য আর্থিক সহায়তা করেছে।


Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form