আপনি মানসিক শান্তি পেতে চান। এটা অনেক বড় একটা বিষয়। আপনি জানেন যে আপনার মানসিক শান্তি পাওয়া দরকার। মন অশান্ত হলে অনেকে যেসব উল্টা পাল্টা কাজ করে মনকে আরো খারাপ করে দেন-আপনি তাদের মত নন। সেজন্য আপনি ইতিবাচক এবং আপনার মন প্রশান্ত হবে, কিন্ত আপনি জানেন না যে কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
ওপরের প্রশ্নের কোন এক কথায় উত্তর নেই। কারণ সকল মন খারাপ হওয়া মানুষ একই জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাবেন না। আসুন আমরা খুঁজে বের করি কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। কারো জন্য এটি হতে পারে উপাসনালয়। কেউ হয়ত নদী বা সমুদ্র তীরে গেলে ভাল বোধ করবেন। কেউ পাহাড় কিংবা জঙ্গল দর্শনে মন ভাল করতে পারবেন। কেউ কোন আত্মীয়ের বাড়ি গেলে মানসিক শান্তি পাবেন।
আপেক্ষিক বিষয় হওয়ার পরও আমরা কিছু জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছি।
যেখানে গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। প্রতীকী ছবি: এবারহার্ড গ্রসগ্রাসটিজার |
কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়? (শান্তি লাভের উপায়)
মানসিক শান্তিকে ইংরেজি ভাষায় Inner peace বলে। একে Mental Peace, Happiness নামেও ডাকা হয়। প্রাচীনকালে মানসিক শান্তি লাভের জন্য লোকেরা ঘর ছেড়ে একেবারে কোথাও চলে যেত। সেখানে তারা ধ্যান করত। এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এভাবে চলে যাওয়াকে বৈরাগ্য বোঝায়। মানসিক শান্তি পাবার জন্য কোথায় যাবেন তা নিচে তুলে ধরছি। দেখুন কোথা গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
যেখানে গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়
এখানে বিস্তারিত সম্ভাব্য তালিকা দেওয়া হলো-যার মাধ্যমে আপনার ইচ্ছাপুরণ সহজ হবে। আপনি জানবেন-কোন জায়গায় গেলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়।
১। উপাসনালয়: আপনি যখন উপাসনালয়ে যাবেন-তখন আপনার এবং সৃষ্টিকর্তার মাঝে আর কোন দেয়াল রাখবেন না। আপনার পেছনে থাকেব আপনার পৃথিবী। এতে করে আপনি অজস্র মানসিক শান্তি লাভ করবেন। উপাসনা শেষে ঘরে ফিরুন।
২। পাহাড়-পর্বত-ঝর্ণা: আপনি পাহাড় পর্বত ভ্রমণের মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাবেন। কারণ আপনি প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন তখন। অবশ্যই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে একা পাহাড়-পর্বত-ঝর্ণা দেখতে যাবেন না। পাহাড়ি মানুষ হবার চেষ্টা করবেন না। কারণ সবসময় পাহাড়বাস আপনার মনকে রুক্ষ করবে।
৩। নদী-সাগর-হ্রদ: নদী ও সাগরের বিশালতা এবং হ্রদের পানি আপনার অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারবে। আপনি সেখানে যান এবং বুক ভরে নিশ্বাস নিন। অবশ্য দীর্ঘ নৌ-ভ্রমণ বিষন্নতা আনতে পারে। তাই সেখানে বেশিদিন থাকবেন না।
৪। বন-জঙ্গল-সাফারি পার্ক: বন-জঙ্গল ভয়ের জায়গা। একা যাবেন না। দলগতভাবে যাবেন। সাথে রাখবেন অস্ত্রধারী ব্যক্তিও। যেন জীব জন্ত আক্রমণ করতে না পারে।
৫। যাদুঘর ও দর্শনীয় স্থান: যেকোন দর্শনীয় স্থান আপনাকে মুগ্ধ করবে। যাদুঘর আপনাকে ভিন্ন সময় দেখোবে। দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করলে আপনি নতুন কিছু পাবেন।
৬। আত্মীয়ের বাড়ি: আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা, তাদের সাথে কথা বলা এবং তাদের সুখ-দুখে ভাগী হওয়ার মাধ্যমে আনন্দ পাবেন। মনে শান্তি পাবেন।
৭। সভা-সেমিনার এবং দলগত ভোজ অনুষ্ঠান: সভা-সেমিনারে অভিজ্ঞদের কথা শুনে আপনি চমৎকৃতহবেন ও নতুন কিছু জানবেন। এভাবে আপনি মনে শান্তি পাবেন। ওই সময়টাতে আপনি ভুলে থাকবেন যে আপনার মনে কিছু কষ্ট রয়েছে বা আপনার মনে শান্তি নেই।
৮। অবস্থার পরিবর্তন: বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন হলে মানসিক শান্তি পাবেন। যেমন-আপনি যদি সবসময় ব্যস্ত থাকেন-আপনার কিছু দিনের জন্য অলস সময় কাটানোর দরকার। আবার আপনি যদি অলস সময় কাটান-আপনি কয়েকদিনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। এসময় নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। আপনি চ্যারিটিতে ভলান্টিয়ারও হতে পারেন। পরিধানের কাপড়েও পরিবর্তন আনুন। সবসময় হঁাটলে কয়েকদিন যানবাহন নিন। আর সবসময় যানবাহন নিয়ে থাকলে এবার একটু হাঁটুন। শহরে বাস করলে গ্রামে যান-গ্রামে বাস করলে সহরে যান। ইত্যাদি।
৯। বাজার: শপিং করুন ঘুরে ঘুরে। দরদাম করে। দেখবেন মন ভাল লাগবে। এটা স্রেফ মজা পাবার জন্য করবেন। বাজারের কোন কিছু আপনার কেনার সাধ্যের বাইরে থাকলে তা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। সব কিছু সকলের সাধ্যে থাকে না।
১০। লঙ্গরখানা-এতিমখানা, হাসপাতাল, কবরস্থান: এতিমখানায় গিয়ে সেখানকার বাচ্চাদের সাথে সময় কাটান। লঙ্গরখানায় গিয়ে দান করুন ও একসাথে খাবার খান। এসব স্থানে আপনি এমন মানুষদের পাবেন যারা আপনার চেয়ে কষ্টর জীবন পার করছেন। হাসপাতালে দেখুন রোগীরা আরেকটু ভাল হবার চেষ্টা করছেন। অনেককে পাবেন যারা শাররীরিকভাবে দুর্বল কিন্তু মানুসিকভাবে ভাল শক্তিশালী। আপনাকে কবরস্থানে যাবার কথা বলছি। সেখানে যাবার আগে আপনি কতকিছুকে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে যাবার পর আপনার মনে কোন ভয় থাকবে না। আপনি নিজের শেষ পরিণতির কথা ভাবার সুযোগ পাবেন। যেখানে কোন কিছুর কোন মূল্য নেই-ভাল কাজ ছাড়া। এতে আপনার মন খারাপ হবার বিষয়গুলোও তুচ্ছ হয়ে ধরা দেবে আপনার নিকট। এভাবে আপনি মনে প্রশান্তি লাভ করবেন।
মানসিক স্বাস্থ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয় ১০ অক্টোবর। ইতিবাচক কাজে অবাধ সুযোগ এবং বিনিয়োগ মানসিক শান্তি লাভে সহায়ক হয়।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রি ও সাইকোথেরাপিস্ট আহসান উদ্দিন আহমেদ মানসিক শান্তি লাভের জন্য সাধ্যের মধ্যে থাকা শখগুলোকে সব সময় উজ্জীবিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নিয়মিত শরীর চর্চা এবং ভাল বোধ করার ইচ্ছা এক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্য যদি উন্নতির দরকার হয়, তাহলে আপনি মানসিক চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তিনি খূঁজে দেখবেন মানসিক অশান্তির পেছনে স্বাস্থ্যগত সমস্যা জড়িত আছে কি না।
কী করলে শান্তি পাওয়া যায় বা কোথায় গেলে শান্তি পাওয়া যায় এই প্রশ্নের সাথে শরীর সুস্থ কি না। ফুসফুসে, মাথায়, কিংবা হার্টে কোন সমস্যা নেই তো এসব বিষয়ও জানা দরকার।
নিজেই নিজের খেয়াল রাখুন, মানসিক শান্তি পাবেন
এরকম হতে পারে যে, আপনি অন্যের থেকে যত্ন আশা করছেন-কিন্তু আপনার মনে হচ্ছে যে, কেউ আপনাকে তেমন পাত্তা দিচ্ছে না। এটা হতে পারে। অন্যের ওপর এরকম আশা নিয়ে থাকলে আপনার কষ্ট বাড়বে।
আপনি নিজেই নিজের খেয়াল রাখুন এবং অন্যের থেকে যত্ন পাবার আশায় থাকবেন না।
আর যদি কারো কাছে কিছু চান এবং সে কাছের কেউ হয় তাহলে তাকে সরাসরি বলে ফেলুন। এরকমটা ভাববেন না যে-সে কেন বুঝছে না যে আপনার মন কি চায়। তাহলে মন খারাপ হওয়াটা কমবে।
মন অশান্ত হলে যারা আত্মহত্যা করে তারা খুব বোকা। নিজে নিজের মৃত্যুর আয়োজন করলে আত্মা প্রশান্ত হবে না। সব সমস্যার সমাধান আছে। চেষ্টা করুন-শান্তি পেতে। কারো সাথে ঝালে হলে তার সাথে সমাধান করে নিন। শান্তি অবশ্যই পাবেন। মতের মিল না হলেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য তার সাথে ভাল ব্যবহার করুন।
টিভি, ফ্রিজ, এসি, গাড়ি, দামী ফোন বা ঘড়ি’র জন্য খুব ইচ্ছা থাকলে আর সামর্থ না থাকলে বাদ দিন। এসব ছাড়াও অনেক মানুষ মহা-মানুষ হয়েছেন।
মানসিক শান্তি পেতে স্থান বদল করতে হয় কেন?
স্থান বদল তথা কোথাও যাওয়ার সাথে মানসিক শান্তি’র সম্পর্ক কী? আসলে স্থান বদল হলে দু’টি ব্যাপার ঘটে নিজের ওপর।
- স্থান বদল করলে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ লাভ হয়।
- স্থিরতা ভেঙ্গে গিয়ে নতুন কিছু নিয়ে ব্যস্ত হওয়া
এই দু’টি বিষয় যদি নিজের ঘরের খোলা জানালায় কিংবা বাড়ান্দায় গিয়েও লাভ হয় কিছুটা শান্তি পাবেন। এতে শরীরে অক্সিজেন লাভের মাত্রা বাড়ে।
মানসিক শান্তি পেতে বেড়াতে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য ভাল থাকার চেষ্টা করা প্রয়োজন। নিজে হাসিখুশি থাকার জন্য পরিকল্পনা করে কাজ করাও দরকার। উপাসনালয়ে যাওয়া এবং মানুষের মধ্যে থাকার চেষ্টাও ভাল ফল দেয়। কখনো কখনো একা থাকাও মানসিক শান্তির জন্য জরুরি-যদি আপনি সবসময় অনেকের মাঝে থাকেন এবং ব্যস্ত থাকেন।