সেতুর রাজনীতি: পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

পদ্মা সেতু কে অতি উৎসাহী পক্ষ স্বপ্নের পদ্মা সেতু বলে ডাকছে। কিন্তু পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান বলছে যে এ সেতু’র অর্থনৈতিক ব্যাপারের সাথে রাজনৈতিক ব্যাপার বেশ মাখামাখি। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই বিরোধী মহলের পক্ষ থেকে। পদ্মা নদীতে পদ্মা সেতু রচনা করেছে অসংখ্য প্রশ্ন আর বিতর্ক। বিশেষ কর এর বিশাল বাজেট ও ব্যয় নিয়ে রয়েছে পদ্মা ব্রিজের সমান বিতর্ক।

পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অনুসরণ করলে জানা যায়- এই সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের আগেও এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ কবে শুরু হয়? পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়- ২০১৪ সালে। পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য: ৬.১৫ কিলোমিটার।

আলোচিত-সমালোচিত মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু সম্পর্কে তথ্য জানা থাকা ভাল।

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু ছবি

পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান 

পদ্মা সেতু একটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্প। এই সেতু নির্মাণ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরকার এবং গণমাধ্যম বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
পদ্মা সেতু দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারে। বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, মোটর বাইক, ট্রেন চলতে পারে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে।
পদ্মা সেতুর দুই পাশে অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। 
এ পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। 
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য: ৩.৮২ মাইল।
এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু, স্প্যান সংখ্যা ও মোট দৈর্ঘ্য উভয়ের দিক থেকে গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু। গভীরতায় বিশ্বের গভীরতম পাইলের সেতু হলো বাংলাদেশের এই পদ্মা সেতু।

এক নজরে পদ্মা বহুমুখী সেতু (আরো তথ্য)

 প্রশ্ন

 উত্তর

 পদ্মা সেতু কোন জেলায় অবস্থিত

পদ্মা সেতু মুন্সীগঞ্জ , শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার মধ্যে অবস্থিত।

 পদ্মা সেতুর পাইলিং গভীরতা কত

১২০ মিটার (৩৯০ ফুট)

 পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের জেলার নাম কি

মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর

মাওয়া (মুন্সিগঞ্জ), জাজিরা (শরীয়তপুর)

 পদ্মা সেতুর উচ্চতা কত

পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত সব পাইলের মোট উচ্চতা মাউন্ট এভারেস্টের চারগুণেরও বেশি। পদ্মা সেতু নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার বা ৬০ ফুট উঁচু।

 পদ্মা সেতু টোল কত

কার বা জিপে ৭৫০ টাকা

 পদ্মা সেতু ঢাকার সাথে কতটি জেলাকে সংযুক্ত করবে

 দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলা।

 পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করেছে কোন দেশ

 বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়। সহায়তা করে চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (সিএসসিইসি)। সেতু নির্মাণ করে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। ২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সরকার তাদের সাথে চুক্তি করে। কথিত আছে যে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল চীনের এই কোম্পানিটি।



পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পদ্মা সেতু চালুর কারণে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়। এ সেতু দক্ষিণের জেলাগুলোতে যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনবে বলে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে।। ভিশন-২০৪১ ও ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ সামনে রেখে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এ সেতু নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দুই পাশে বেসরকারি সিটি গড়ে উঠতে মুরু করেছে। জমির দাম বেড়ে গেছে। শিল্প কারখানা বেড়ে যাচ্ছে।

যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনে সময় বেঁচে যাওয়ায় দক্ষিণে বিভিন্ন সেবামূলক অফিস গড়ে উঠছে।


আরো পড়ুন: চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” ডাকা হয় কেন?


পদ্মা সেতুর রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। সেতুতে যে স্প্যানগুলো বসাচ্ছে, এগুলো তার কাছে ছিল জোড়াতালি দেওয়া। বলেছিল, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না। চড়লে ভেঙে পড়বে। আবার তার সঙ্গে কিছু দোসরেরাও…তাদেরকে এখন কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রশ্ন রেখেছিলেন, পদ্মা সেতু কি আওয়ামী লীগ নেতার পৈতৃক সম্পত্তি দিয়ে বানানো হয়েছে যে এরকম মন্তব্য করছে। 


পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু

পদ্মা সেতু বিশ্বের ১৩৫ তম দীর্ঘ সেতু। আর পানিতে প্রবাহিত সেতুর মধ্যে এটি ৪০ তম দীর্ঘ সেতু।


পদ্মা সেতু উদ্বোধন:পদ্মা সেতু কবে উদ্বোধন করা হয়

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ: ২৫ জুন, ২০২৩। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও বঙ্গবন্ধুর ম্যূরাল-১ উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 


পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত?

পদ্মা সেতু কত কিলোমিটার, অর্থাৎ পদ্মা সেতু কত কিলোমিটার লম্বা সেটি দিয়ে এই সেতুর বিশালত্ব বোঝানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। 

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য কত? পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য: ৬.১৫ কি. মি. বা ৩.৮২ মাইল বা ২০,১৮০ ফুট

পদ্মা সেতুর প্রস্থ কত? পদ্মা সেতুর প্রস্থ: ১৮.১৮ মিটার বা ৫৯.৬৫ ফুট।


পদ্মা সেতুর খরচ কত

২০০৭ সালে প্রথম প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। শেষ হবার সময় ব্যয় হয়েছে, পদ্মা সেতু অনুচ্ছেদ অনুসারে, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ কারণে এটি একটি ভয়াবহ রকমের প্রশ্নবোধক প্রকল্প।


পদ্মা সেতুর টোল

টোল নির্ধারণ করা হয়েছে এই সেতুতে। পদ্মা সেতুর টোল তালিকা:

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে-

  • মোটরসাইকেল-১০০ টাকা
  • কার বা জিপ- ৭৫০ টাকা
  • পিকআপ ভ্যান- ১ হাজার ২০০ টাকা
  • মাইক্রোবাস- ১ হাজার ৩০০ টাকা
  • ছোট বাস- (৩১ আসন বা এর কম) ১ হাজার ৪০০ টাকা
  • মাঝারি বাস- (৩২ আসন বা এর বেশি) ২ হাজার টাকা
  • বড় বাস- (৩ এক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা 

টোল আদায় থেকে পদ্মা সেতুর খরচ উঠতে ৯ বছর সময় লাগবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ৩০ বছর পর সুদসহ মন্ত্রণালয়কে খরচের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য শুধু টোল দিয়ে এই সেতুর টাকা কবে উঠে আসছে তা বলা ঠিক নয়। কারণ সেখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে যে বাড়তি মুনাফা হবে সেটাকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।


পদ্মা সেতুর পিলার ও স্প্যান সংখ্যা

পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান ৪১টি, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। পদ্মা সেতুর মোট পিলার রয়েছে ৪২টি।

পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি:  ৪২টি

পদ্মা সেতুর মোট স্প্যান সংখ্যা কত:  ৪১টি


কয়েকটি প্রশ্ন (FAQ)

পদ্মা সেতু কয়টি জেলাকে সংযুক্ত করেছে?

পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলাকে সহজ যোগাযোগের জন্য সংযুক্ত করেছে করেছে।


পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের জেলার নাম কি

মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর।


পদ্মা সেতু কোথায় অবস্থিত

বাংলাদেশের পদ্মা সেতু গঙ্গা তথা পদ্মা নদীর ওপর অবস্থিত। পদ্মা সেতুর একপ্রান্ত মাওয়া (মুন্সীগঞ্জ) এবং অপর প্রান্ত জাজিরা (শরীয়তপুর)।


হয়ত মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু সম্পর্কে সকল প্রশ্ন এখানে আলোচিত হয়নি।  যেমন পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল কত বছর? এটি মূলত ১০০ বছর। তবে আমরা পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এখানে আলোচনা করেছি। পদ্মা বহুমুখী সেতু একটি বহুল আলোচিত সেতু। এর সাথে খালেদা জিয়া ও মু. ইউনুস এবং বিশ্ব ব্যাংকের নাম জড়িত। পাশাপাশি জড়িত আছে সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম। বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন করেনি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের জন্য। 


Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form