গাজীপুর সাফারি পার্ক: প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় গন্তব্য

আপনি কি ভ্রমণ পছন্দ করেন? খোলা জায়গায় চিড়িয়া দেখার জন্য ভাল একটি স্থান সাফারি পার্ক। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চমৎকার সাফারি পার্ক রয়েছে অ্যাডভেঞ্চাপূর্ণ ভ্রমণের জন্য। গাজীপুর সাফারি পার্ক এরকম খোলা জন্তু দেখানোর পর্যটন স্থানের তালিকায় থাকা পার্কগুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সে কারণে এই পার্বে প্রতিদিন অনেক মানুষ ভীড় জমান।

সত্যি বলতে, গাজীপুর সাফারি পার্ক এশিয়ার বৃহত্তম সাফারি পার্কগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একটি, এবং এটি প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য অবশ্যই একটি দারুন দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের মানুষ ভ্রমণ প্রিয়। তারা এ পার্ক দেখতে যান। পার্কটি গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। এটি মূলত দেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে। এটি সেখানকার  শালবনের ৩৮১০ একর জুড়ে বিস্তৃত, এবং এই পার্ক সিংহ, বাঘ, হাতি, গন্ডার, জিরাফ, জেব্রা এবং আরও অনেক প্রাণী সহ ৩০০০-এরও বেশি প্রাণীর যত্নশীল আবাসস্থল।


গাজীপুর সাফারি পার্ক
সাফারি পার্কে জন্তু। ছবি:সংগৃহীত

গাজীপুর সাফারি পার্ক ভ্রমণ: প্রকৃতি, প্রাণী ও উদ্ভিদ মন জুড়াবে

যারা এর আগে পার্কটিতে গিয়েছেন-তাদের মতে, পার্কটি দেখার জন্য পায়ে হাঁটা কিছুটা বিপদের কারণ হতে পারে। তাই, দর্শনার্থীরা বিভিন্ন উপায়ে পার্কটি ঘুরে দেখতে পারলেও জীপ, বাস, বা ট্রাম দর্শনার্থীদের ঘুরাতে নিলে তা বেশি নিরাপদ হবে। 

জন্তু দেখতে আসা লোকেরা নিজেরাও গাজীপুর সাফারি পার্ক এর মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে পারে। 

প্রাণী দেখার সুবিধার যেন ত্রুটি নেই সেখানে। পার্কটিতে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রাখা হয়েছে, যাতে উঠে দর্শনার্থীরা পার্কে থাকা স্বাধীন বিচরণশীল প্রাণীদের কাছ থেকে দেখতে পারে।

একটু নজর দিন- পার্কে অনেক গাছ-লতা-পাতা দেখেও শান্তি পাবেন।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পশুপাখি ছাড়াও, পার্কটিতে একটি লেক, একটি খেলার মাঠ, একটি প্রদর্শনী দোকান, এবং একটি রেস্তোরাঁ সহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় স্থাপনা রয়েছে৷ যেন পার্কে আসা লোকেদের কোন অসুবিধায় পড়তে না হয়। 

কখন খোলা হয় এবং গাজীপুর সাফারি পার্ক এর টিকিট এর দাম কত? গাজীপুরের এই বিরাট পার্কটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং এর টিকেট বা প্রবেশমূল্য দুইটি। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২০ টাকা গুনতে হয়। শিক্ষার্থীরা ১০ টাকা দিয়ে ভেতরে যেতে পারেন।

সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক বন্ধ থাকে। পুরোটা ঘুরে দেখতে চাইলে সারাদিন চলে যাবে।


গাজীপুর সাফারি পার্ক সম্পর্কে তথ্য

 বিষয়

তথ্য 

 নাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক 

বা সংক্ষেপে 

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক 

বা 

গাজীপুর সাফারি পার্ক

 অবস্থান

বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন মাওনা ইউনিয়নের বড় রাথুরা মৌজা ও সদর উপজেলার পীরুজালী ইউনিয়নের পীরুজালী মৌজার শালবন।

 আয়তন

শাল বনের ৪৯০৯.০ একর বন ভূমি এর মধ্যে ৩৮১০.০ একর এলাকাকে সাফারী পার্কের মাস্টার প্ল্যানের আওতাভূক্ত করা হয়েছে।

 প্রাণী

ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির জন্য নিরাপদ আবাসস্থল হিসাবে পরিচিত। বাঘ, হরিণ, সিংহ,হাতি, জিরাফ, জেব্রা ইত্যাদি।

 নির্মাণ

প্রকল্পটি ২০১০ সালে ৬৩.৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং পার্ক প্রতিষ্ঠা কাজ শুরু হয় এবং ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুর এর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়।   



গাজীপুর সাফারি পার্কে ঘুরতে গেলে কী পাবেন

গাজীপুর সাফারি পার্কে গেলে কী কী ব্যাপার আপনার ভাল লাগবে, আপনি কী পাবেন:

- প্রাকৃতিক তথা জংলী আবাসস্থলে বিভিন্ন ধরণের প্রাণী দেখতে পাওয়া যায় এই সাফারি পার্কে।

-বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী দেখা এবং প্রাণী সংরক্ষণের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।

-শুধু প্রাণী নয়- শাল বনের সুন্দর দৃশ্য দেখে মন শান্ত করা যায় এই পার্কে।

-একটি মজার এবং শিক্ষামূলক দিন কাটানোর জন্য এই পার্ক হতে পারে আদর্শ প্রাকৃতিক স্থান।

আপনি যদি প্রকৃতির কাছে থেকে অভিজ্ঞতা নিতে চান বা একটু মানসিক সুখ পেতে চান বা আপনি যদি নিজের জন্য বা পরিবারের সদস্য বা বন্ধুদের জন্য একটি অনন্য এবং উত্তেজনাপূর্ণ জংলী স্থান খোঁজেন, তাহলে গাজীপুর সাফারি পার্ক সত্যিই সেরা জায়গা।


জন্তু তালিকা: বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

জানোয়ার ও পাখি তালিকা

 

পশু

পাখি ও ছোট প্রাণী

জলহস্তী, বাঘ, সিংহ, হাতি, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, ক্যাংগারু, জেব্রা, বানর, হনুমান, ভাল্লুক, গয়াল, নীল গাই, গণ্ডার, বন বিড়াল, খরগোশ, শিয়াল, খেঁকশিয়াল, কুমির, বনছাগল,  ইত্যাদি।

পাখি পরিযান, জলচর পাখি, বেজি, বনরুই, ছোট খাটাশ, ও অজগরসহ অন্যান্য।


পার্ক পরিদর্শনের জন্য কয়েকটি টিপস

যদি আরাম চান-তাহলে গাজীপুর সাফারি পার্ক পরিদর্শনের জন্য আপনি কিছু বিষয় আগে থেকেই মাথায় রাখবেন। এখানে সেরকম কিছু টিপস রয়েছে:

  • আরামদায়ক জুতা এবং জামা পরে বের হন। টি-শার্ট পছন্দ করতে পারেন।
  • ত্বককে পোড়াতে না চাইলে সানস্ক্রিন এবং একটি টুপি (ক্যাপ/হ্যাট) সঙ্গে আনুন।
  • ভ্রমণ এর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য একটি ক্যামেরা বা ভাল ফোন ক্যামেরা সঙে্গ নিবেন।
  • অবশ্যই প্রাণী ও পরিবেশের প্রতি দয়ালু হবেন। তাদের ক্ষতি হয় বা তারা বিরক্ত হয় এমন কাজ করবেন না।


চিড়িয়াখানা বনাম সাফারি পার্ক

সাধারণত চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুসমূহ আবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং দর্শনার্থীগণ মুক্ত অবস্থায় থেকে জীবজন্তু পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশে এটাই যেন প্রথা। কিন্তু সাফারী পার্কে বন্যপ্রাণীসমূহ উন্মুক্ত অবস্থায় বনজঙ্গলে বিচরণ করবে এবং মানুষ সতর্কতার সাথে চলমান যানবাহনে করে সাফারি পার্ক ঘুরতে পারেন।


চাইলে আজই সাফারি পার্ক যান, আনন্দ নিন! গাজীপুর সাফারি পার্ক খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা দেবে, কারণ-এই পার্ক খোলা জায়গায় বা খাঁচাহীন জায়গায় বাঘ, হরিণ, সিংহ,হাতি ইত্যাদি দেখাতে যত্ম করে তৈরি। সেখানে জিরাফ, জেব্রাও পাবেন। মনে শান্তি পাবেন সাফারি পার্ক দর্শনে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form