চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে? চোখ ওঠার কারণ ও প্রতিকার জানুন

চোখ উঠা একটি মৌসুমী সমস্যা। যখন এ রোগ কোন এলাকায় দেখা দেয়-তখন প্রায় সারা এলাকার মানুষকে এ রোগ আক্রান্ত করে ফেলে। প্রথমে কয়েকজনের হলেও পরে অনেকের হয়। এ রোগ ছড়িয়ে পড়া বেশ অস্বস্তিকর। এটি কতটা ক্ষতিকর তা অনেকেই জানতে চান।

প্রশ্ন হলো- চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে? হ্যাঁ, চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ। একজনের এ রোগ হলে, অন্যরা তার সাথে ছোঁয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তাদেরও এ রোগটি হয়। তবে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও এটি মানুষের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। সাধারণত কোন ওষুধ ছাড়াই বেশিরভাগ রোগীর চোখ ওঠা ভাল হয়ে যায়। চোখে ড্রপ দিতে হয় কারো কারো।

কখন চোখে ড্রপ দিতে হবে বা ডাক্তারের কাছে যেতে হবে ইত্যাদি বিষয়সহ চোখ ওঠার অন্যান্য তথ্য বিস্তারিত জানুন।

চোখ উঠা
চোখ উঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ। ছবি: Myburgh Roux, Pexels


কনজাংটিভা কী? চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে?

চোখ ওঠা রোগকে কনজাংটিভা বলে। চোখ ওঠলে চোখ লাল হয়। চোখের আরাম নষ্ট হয়। চোখ খুলে রাখতে সমস্যা হয়। চোখ উঠা বা কনজাংটিভা একটি ছোঁয়াচে রোগ।

চোখ উঠলে রোগী চোখ বন্ধ করলে এবং খুললে অস্বস্তি অনুভব করে। চোখে অল্প ব্যথা হয়। 


আক্রান্তদের চোখের দিকে তাকালেই কি ‘চোখ ওঠে’?

না। আক্রান্তদের চোখের দিকে তাকালেই ‘চোখ ওঠে’ না। তাহলে চোখ ওঠা রোগ কীভাবে ছড়ায়? চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে নয়? উপরেই তো বলা হল যে-চোখ উঠা ছোঁয়াচে। হঁ্যা, চোখ উঠা ছোঁয়াচে রোগ বটে। আক্রান্তদের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়। যেমন: রোগীর ব্যবহৃত বস্তু (গামছা, তোয়ালে, রুমাল) ব্যবহার করলে অন্যদের চোখ আক্রান্ত হবে। হাত না ধুয়ে চোখ ছুঁলেও ছড়ায় রোগটি। অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস কেউ ধরার পর যদি না ধুয়ে হাত চোখে দেয় তাহলে সমস্যা হবে। কিন্তু রোগীর চোখে তাকালে এ রাগ হয় না। চোখে চশমা পরলে মূলত আরাম লাগে। এতে সরাসরি তাকালে চোখে রোগ চলে আসবে এমন ব্যাপার নেই। 


আরো পড়ুন: চোখের নিচে গর্ত হয় কেন? সমস্যা দূর করার উপায় জানুন।


চোখ ওঠা রোগ কেন হয়? 

তিন কারণে চোখ ওঠা রোগ হয়। 

(এক) ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে চোখ উঠে।

(দুই) অ্যালার্জির কারণে চোখে সমস্যা হয়ে চোখ উঠে।

(তিন) মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা দ্বারা চোখ উঠার রোগ হয়।


চোখ উঠা রোগের লক্ষণ কী? 

যখন কেউ চোখ উঠা রোগে আক্রান্ত হয় তার চোখ লাল হয়ে যায়। অবশ্য চোখ লাল হবার আরো কারণ থাকে। সাধারণত প্রথমে এক চোখ লাল হয়, পরে দুই চোখই লাল হয়। আরো কিছু সমস্যা হয়; সেগুলো হলো-

চোখের পাতা ফুলে যায়

অস্বস্তিবোধ হয় চোখে। চোখে ব্যথাও হয়

আলো সহ্য হয় না

চোখে কেতুর বা পিচুটি হয়

চোখে হালকা জ্বালাপোড়া হয়

ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের দুই পাতা একটা সাথে অন্যটা লেগে থাকে

চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে

চোখে খচখচ করে। 

চোখে ঝাপসা দেখা যায় যদি কর্নিয়া আক্রান্ত হয়


চোখ উঠার প্রতিকার বা প্রতিরোধে করণীয়? 

হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না

রোগীকে কালো চশমা পরিয়ে দিন

ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে

বেশিরভাগ রোগীর চোখ উঠা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়

চোখ মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করতে হবে। সেটি দিয়ে অন্য কাজ করা যাবে না।

আইসোলেসন বা চোখ ওঠা রোগীদের আলাদা থাকা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যদের মধ্যে চোখ উঠা ছড়িয়ে না পড়ে।


আরো পড়ুন: চোখের পাতা কাঁপে-কী করবেন?


কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত? 

প্রয়োজনে ডোজ মেনে আর্টিফিশিয়াল টিয়ার, অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তা ব্যবহার করতে হবে

আক্রান্তরা ওষুধের দোকান থেকে স্টেরয়েড জাতীয় ড্রপ নেন সাধারণত। কিন্তু এ জাতীয় ড্রপ বেশি দিলে চোখের জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন: গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সুষ্টি হয়। নিজের চিকিৎসা নিজে করতে যাবেন না।

যদি চোখের খচখচে ভাব যদি বেশি হয়, বেশি পরিমাণে চোখে কেতুর জমে। এবং চোখে ঝাপসা দেখে, তাহলে ডাক্তারের নিকট যাওয়া ভাল।

যদি চোখ বেশি ফুলে যায় এবং কনজাংটিভায় পানি জমতে দেখেন; সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতেই হবে।

আর যদি রোগীর চোখ দিয়ে রক্তও পড়ে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। যদিও চোখ উঠলে সাধারণত রক্ত পড়ে না।


চোখ উঠা সারতে কতদিন লাগে?

চোখ উঠলে ৭ থেকে ১০ দিন অন্তত রোগী যন্ত্রণা ভোগ করেন। এই কয়দিনের মধ্যেই এ রোগ ভালো হয়ে যায়। তবে, কারো কারো ক্ষেত্রে হয়তো ১৫ দিনের মতো সময় লাগতে পারে। তবে ৭ে দিন পরই চক্ষু ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।


চোখ উঠলে রোগীর চোখ লাল হয়। দেখতে খুব সুন্দর লাগে না। চোখে পিচুটি লাগে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই অন্যরা চোখ উঠা রোগীর ব্যবহার করা জিনিস ধরতে পারবে না। চোখ উঠা রোগ সাধারণত নিজে নিজে ভাল হয়। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে ভাল হওয়ার লক্ষণ না থাকলে চোখ বিশেষজ্ঞ এর নিকট যেতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form