ডাবের পানি খেতে বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। এই পানি আশ্চর্যভাবে জনপ্রিয়। ডাবের পানির উপকারিতা এবং ডাবের পানির পুষ্টিগুন অনেক। পাশাপাশি ডাবের পানির কিছু অপকারিতাও আছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় ডাব ভাল হয়।
ডাবের পানির উপকরিতা আছে। কারণ এতে আছে খনিজ পদার্থ। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম ডাবকে জনপ্রিয় করেছে। ডাবের পানি গরমের আরাম। শরীরকে শীতল করতে ডাবের পানির জুড়ি নেই। তবে ডাবের পানিতে পটাসিয়াম বেশি থাকায় এটি বার বার গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হতে পারে।
নারকেল গাছ ও ডাব: ছবি: দিনক্ষণ২৪.কম |
ডাবের পানির উপকারিতা (ডাবের পানির পুষ্টিগুন)
ডাবের পানি ইংরেজি “coconut water”। ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লেভিন এবং কার্বোহাইড্রেট আছে। এই পানি খেতে বলা হয় ডায়রিয়া হলে। পাশাপাশি এটি দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্যও।
নারকেল গাছের পানি পাকা অবস্থায় নয় বরং এটি খেতে বলা হয় কচি অবস্থায়। এলাকা ও মাটির গুণ ভেদে ডাবের পানির স্বাদ ভিন্ন হয় কিছুটা।
উপকারী উৎসেচক থাকায় ডাবের পানি আমাদের শরীরে খাদ্য হজমে অত্যন্ত সাহায্য করে।
কচি ডাবের পানির উপকারিতা বেশি।
আরো পড়ুন: গ্রিন টি তৈরির নিয়ম কী?
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। ডাবের পানির অপকারিতা হলো-এর পটাসিয়াম। যা কিছু রোগী পান করলে তাদের ক্ষতি হয়। ডাবের পানির ক্ষতিকর দিক এটি।
নারকেল গাছে ডাব। ছবি: দিনক্ষণ২৪.কম |
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
সকালে নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। সেইসঙ্গে এটি ব্লাড সুগারের মাত্রা কমায়। এতে গ্লুকোজের মাত্রাও আয়ত্বে থাকে।
টানা ১০ দিন ডাবের পানি খেলে কী হয়? (১০টি উপকার)
১। শরীরে পানির ভারসাম্য রাখে ডাবের পানি । তাই ক্ষতিকর পানীয়’র বদলে তালিকায় রাখুন ডাবের পানি।
২। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম রয়েছে। তাই শরীরে এই সব খনিজের অভাব ডাবের পানি পূরণ করবে।
৩। মূত্রবর্ধক উপাদান রয়েছে ডাবের পানিতে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট পরিষ্কার করে।
৪। শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে ডাব। থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন বাড়ায় এই পানি।
৫। রোদে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা দিনে দু’-তিনটি ডাবও খেতে পারেন। ডাবের পানি প্রাকৃতিক ভাবেই স্যালাইন ওয়াটারের কাজ করে।
৬। ডাবের পানিতে উপকারী উৎসেচক আছে। যা হজম ক্রিয়ায় সাহায্য করে। ভারী কিছু খাওয়ার পর ডাবের পানি উপকারি।
৭। ডাবের পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধে কার্যকরী।
৮। শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে ডাবের পানি। ব্যায়াম করার পর এক গ্লাস ডাবের পানি পান করুন।
৯। প্রতিদিন এক কাপ ডাবের পানি পান করলে ত্বক আর্দ্র থাকে। এটি ব্রণের সমস্যা দূরে ঠেলে।
১০। ডাবের পানির মধ্যে কিছু ফাইবার আছে। এটি হজমে বেশ সাহায্য করে। নিয়মিত নারকেলের পানি পান করলে গ্যাসট্রিকের সমস্যা কমায়।
আরো পড়ুন: ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম।
ডাব গাছ। ছবি: দিনক্ষণ২৪.কম |
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
প্রথমে নারকেল গাছ থেকে কচি নারকেল কেটে আনুন। কচি নারকেলকেই ডাব বলা হয়। তারপর একটি ধারালো দা দিয়ে এর ওপরের ছাল কেটে ফেলে দিন। ভেতরে একটি শক্ত আবরণ থাকবে। সেটিকে আঘাত করা যাবে না। শুধু ওই আবরণের মুখটা ছিদ্র করে দিয়ে ভেতরে পাইপ ঢুকাতে পারেন। আপনি চাইলে গ্লাসে ডাবের পানিটা ঢেলে নিতে পারেন। এবার পান করুন।
এরপর আপনি আবরণটিকে আঘাত করে ভেঙ্গে দু’টুকরো করুন। ভেতরে আইসক্রিমের মত কিছু পাবেন। চামচ দিয়ে তুলে সেটিও খান।
ডাবের পানিতে কি থাকে?
ডাবের পানির উপাদান হলো-পানি, চিনি, ভিটামিন সি, আঁশ এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান। এই পানিতে জিংক থাকে। তবে এর প্রায় ৯৫%পানি।
ডাবের পানিতে কি গ্যাস হয় সেটি নিয়ে জানার আগ্রহ আছে অনেকের। ডাবের পানিতে কোন এসিড থাকে? ডাবের পানিতে কিনেটিন থাকে যা স্নায়ুসংক্রান্ত রোগে উপকারী। অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে ডাবের পানিতে।
ডাবের পানিতে কোন হরমোন পাওয়া যায়? ডাবের জলে সাইটোকাইনিন নামক হরমোন পাওয়া যায়। এই ডাবের পানির বিকল্প খাবার স্যালাইন।যা পানিতে গুলে খেতে পারেন।
ডাবের পানিতে কত ক্যালরি থাকে জানলে অবাক হবেন। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৭ ক্যালোরি তথা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি রয়েছে।
জোড়া নারকেল গাছ। ছবি: দিনক্ষণ২৪.কম |
ডাবের পানি সংরক্ষণের উপায়
ডাবের পানি ফ্রিজে রাখলে কি হয়? সব ঋতুতে হাতের নাগালেই ডাব পাওয়া যায়। নিয়মিত ব্যবহারের জন্য ডাবের পানি ফ্রিজে রেখেও সংরক্ষণ করা যায় ডাব পানি। ডাবের পানি কতক্ষন ভালো থাকে? দুই থেকে তিনদিন এই পানি ডাব থেকে বের করার পর ভাল থাকে।
ডাব না কাটা অবস্থায় পানি ভাল কয়েক সপ্তাহ বা মাস।
মুখে ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা অনেক। ডাবের পানিতে আছে এসেনশিয়াল মিনারেলস, ভিটামিনস, সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম। এছাড়াও এতে অ্যান্টি মাইক্রোভাল এবং অ্যান্টি ফাংগাল প্রপার্টিস থাকে। এসব উপাদান স্কিন ভাল রাখে। ব্রণ দূর করে। ত্বকের অন্যান্য দাগ দূর করে।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
এই পানি পান করলে শরীরে ইলেকট্রোলাইটস ও তরল পদার্থের পরিমাণ বাড়ে। সেজন্য গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকেই নারকেলের জল পান করলে ভাল হয়। কারণ ডাবের জলে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড। গর্ভকালীন সময় পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি।