নদী শুকিয়ে যাওয়া একটি বিরাট ঘটনা। সকলের জন্য এ ঘটনা খুবই নেতিবাচক ঘটনা। প্রকৃতি প্রেমীরা এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। এরকম ঘটনা স্মরণকালের মধ্যে হয়নি।
কিন্তু কেন এই বহুল পরিচিত নদীটি শুকিয়ে যাচ্ছে? এরি নিউজ জানিয়েছে- প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাজ্যের সুপরিচিত এই টেমস নদীর উৎস শুকিয়ে গেছে। প্রকৃতির রাজ্যে এটি বিপর্যয়েরই ইঙ্গিত।
আলোচিত টেমস নদীর পানির উৎস এর আগেও মাজে মাঝে শুকিয়েছে। তবে এবার তা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বাধিক মাত্রায় শুষ্ক হয়েছে বলে ধারণা করছেন নামকরা পরিবেশবিদগণ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর জেরে খরার কবলে পড়তে পারে পুরো বৃটেন। এমনকি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির তেমন প্রস্তুতিও নেই।
সেদেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, গড় বৃষ্টির দিক থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাসটি ছিল ১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে শুষ্ক। এ সময়ে ২৩.১ মিলিমিটার গড় বৃষ্টি মাপা হয়েছে। ওই দেশের কিছু কিছু অংশে জুলাই মাসটি ছিল এতদিনের মধ্যে সব চেয়ে শুষ্ক মাস।
ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত টেমস নদী ২১৫ মাইল জুড়ে। প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহই টেমস নদীর উৎস। সাধারণত গ্রীষ্মকালে এ উৎসটি শুষ্কই থাকে। তবে পানি গবেষকরা বলছেন, এ বছর আগের বছরগুলির তুলনায় নদীর পানি সেখানে অনেক কমেছে।
ব্রিটেনের নদী সংরক্ষণবিষয়ক বিখ্যাত সংস্থা রিভার্স ট্রাস্টের এক কর্মকর্তা এলিসডেয়ার নাউল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, উৎসটি খুবই ওপরেেএসে গেছে। অর্থাৎ অগভীর। এর ফলে নদীতেও পানি কমেছে। এবং সেটা এতটাই যে এই নদীর শুকনো জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। অথচ, এই সময়ে ওই শুষ্ক জায়গা পুরোপুরি তলিয়ে থাকার কথা ছিল। এবং ওই এলাকা সব সময়েই ভেজা থাকা উচিত।
সেখানে এক দিকে নজিরবিহীন উষ্ণতা এবং অন্য দিকে কম বৃষ্টিজনিত পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি পানি সরবরাহ কোম্পানি ইতিমধ্যে হোসপাইপ ও স্প্রিংকলার সিস্টেম ব্যবহারের উপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। টেমস ওয়াটার নামের আরো একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান একই রকম ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
বৃহস্পতিবার গ্রেট বৃটেনের ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে চার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাজনিত সতর্কতা কার্যকর হয়েছে। গত মাসে সে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছনোর পর দেশটির আবহাওয়া দফতর প্রথমবারের মতো এ ধরনের সতর্কতা জারি করেছিল। এটি ছিল যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের ভয়াবহ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও জলসংক্রান্ত গবেষক হান্না ক্লোক বলেন, কম বৃষ্টির কারণে নদী ও জলাধারাগুলোতে পানির স্তর নিচে নেমেছে। সেখান থেকেই ফসলের চাষ ও খাওয়ার পানি এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের পানি মজুত করা হচ্ছে।
গবেষক ক্লোক বলেন, আগস্টে যদি বৃষ্টি না হয়, অর্থাৎ তখন যদি শুষ্ক শীতের মৌসুম থাকে, তাহলে বসন্তকাল এবং পরবর্তী গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড বিপদে পড়ে যাব আমরা বৃটেনবাসী। তখন সত্যিই আমাদের আর কোনো পানির উৎস মিলবে না।
পড়ুন: এলএনজি রপ্তানি কমিয়ে দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।
তিনি মনে করেন, হোসপাইপ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের মনে সচেতনতা তৈরি করা হবে হয়ত, তবে এর চেয়ে বেশি কাজের বিষয় হলো, জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ করা ও প্রয়োজনীয় নীতি তৈরিতে মনোযোগী হওয়া।