অর্থনৈতিকভাবে কে বেশি শক্তিশালি- যুক্তরাষ্ট্র নাকি সৌদি আরব?

GDP of KSA

 

সত্যি বলতে কি, বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি সবাই স্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্র অনেকগুলো বৈশ্বিক সংস্থায় অন্যান্য সদস্য দেশের তুলনায় বেশি চাঁদা দিয়ে থাকে। তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা দুর্যোগে কিংবা দারিদ্র্য দুরিকরণে অনুদান প্রদান করে থাকে। 

এছাড়া সামরিক দিক থেকেও এই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবাই দুর্বল। তাদের সামনে দাঁড়ানোর সাহস কোন ছোট সামরিক শক্তির নেই। বড়দের থাকলেও ক্ষয়ক্ষতি দুইপক্ষের অনেক বেশি হবে বিবেচনায় কেউ যুক্তরাষ্ট্র কে ঘাটাতে সাহস করে না। 

তবে চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি এরকম কিছু দেশের সেরকম অর্থনৈতিক শক্তি রয়েছে বটে। ইদানিং তুরস্ক সামরিক দিক থেকে বেশ আলোচনায় থাকছে। ইরানও এরকম সামরিক ব্যাপারে আলোচনায় থাকে। 

মজার ব্যাপার হলো- যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সৌদি আরবের বন্ধুত্ব রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক থেকে পেছনে ফেলে দেবে সৌদি আরব- এমন ধারণা আমাদের মাথায় ছিল না। আর সেরকমই ধারণা দিচ্ছে অর্থ বিষয়ক বিশ্বের সর্ববৃহৎ অভিভাবক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।

আইএমএফ ভবিষ্যদ্বানি করেছে যে ২০২২ সালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা অতিক্রম করবে। গত বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে আইএমএফ এই অর্থনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিয়েছে। 

শুধু তাই নয়, প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ বাড়বে সেটিও বলেছে সংস্থাটি। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, এই সময়ে সৌদি আরবের মোট দেশজ উৎপাদন সাত দশমিক ছয় শতাংশ বেড়ে যাবে। প্রায় এক দশকের মধ্যে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সৌদি আরবে এই প্রথম এতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। কিন্তু কী এমন ঘটেছে যে এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে হঠাৎ করে? এই প্রশ্নের জবাব আইএমএফ জানিয়েছে। এ বছর তেল বিক্রি করে তারা এইরকম মুদ্রার পাহাড় করেছে। ইউরোপের বৃহৎ যুদ্ধ এই সুযোগ তাদের করে দিয়েছে।

অন্যদিকে, প্রতাপশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করতে হবে বলে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। দেশটিতে মোট জিডিপি বৃদ্ধির হার দুই দশমিক তিন শতাংশ, যা গত বছরে হওয়া পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রায় অর্ধেক। 

২০২০ সালে সৌদি আরবে করোনা মহামারির ধাক্কা লেগেছিল। সেই মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে সৌদি আরর এত বিপুল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবার। অবশ্য সে সময় সৌদি আরবের অর্থনীতি তিন দশমিক ৪ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল হয়েছিল। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি ছিল কমতির দিকে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয় দুই দশমিক তিন শতাংশ। 

আইএমএফের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ব্যাপকভাবে ব্যবসায়িক সংস্কার, তেলের দামের উচ্চ বৃদ্ধির ও মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দা থেকে উৎপাদন শক্তি পুনরুদ্ধারের কারণে তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব সম্ভবত এই বছর বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি দেশ হতে পারে।  ফলে এটি বৈশ্বিক রাজনীতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

সৌদি আরব অর্থ খরচ করে বিলাসিতা করে বলে অনেকের ধারণা। তাই আইএমএফের মতামত এমন ছিল যে,, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করবে দেশটি তার তেল থেকে পাওয়া রাজস্ব অতিরিক্ত ব্যয় করবে কি না তার উপর। সেটি বেুঝে খরচ করলে সৌদি আরব সারা বছর গড় দুই দশকিক আট শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি বজায় রাখতে পারবে। 

বিপরীত দিক থেকে মার্কিন অর্থনীতিকে বেশ কয়েকটি প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে এই সময়ে। ওই প্রতিবেদনে আইএমএফ উল্লেখ করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির হার থেকে এই বছর শেষে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।

পড়ুন: তুরস্ক এখন থেকে ‘তুর্কিয়ে’

সৌদি আরব সমগ্র মুসলিম বিশ্বের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। কারণ এই দেশ ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.)  এর স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র দেশ। যেখানে মুসলিমরা হজ্ব পালনের জন্য যান। এছাড়া এই দেশটির ভাষাও আরবি এবং এটি ওআইসি’র একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এসব কারণে সৌদি আরবের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাদের কাছে একটি আবেগীয় ব্যাপার। পাশাপাশি অমুসলিম দেশগুলোও এ খবরে খুশি হতে পারে-কারণ সৌদি আরবও বিভিন্ন দেশের দুর্যোগে ও দারিদ্র্য দূরীকরণে দান করে থাকে।


Post a Comment

Previous Post Next Post

Contact Form