ভোজ্যতেল (Edible oil) হিসেবে সয়াবিন তেল (Soybean Oil) অত্যন্ত জনপ্রিয় রাধুনীপাড়ায়। এই তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিশ্বজুড়ে। তবে এই তেলই যে একমাত্র ভোজ্য তেল তেমনটি নয়। কখনো কখনো এটি প্রধান ভোজ্যতেল হয় না। এটির স্থান দ্বিতীয় হয়ে থাকে অনেক সময়। বাজারে এই তেলের তেলেসমাতি চলছে বাংলাদেশে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সয়াবিন তেলের দাম। যদিও এই তেলটি পামওয়েলের চেয়ে সস্তা ছিল না। তবুও বাংলাদেশে এর চাহিদা অনেক বেশি।
সাধারণত ইন্দোনেশিয়া কিংবা মালয়েশিয়া থেকে বেশি পরিমাণে ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। আমদানি পরিমাণ কমিয়ে বা রিফাইনিং কমিয়ে বাজারে সরবরাহ কমানো হয়। অথবা অহেতুক তেল মজুত করে তেলের দাম বাড়ানো হয়। এককভাবে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারলে এবং কিছু তেলবীজ নিজেরা উৎপাদন করতে পারলে তেলের দাম নিয়ে এত রাজনীতি কিংবা কারসাজি কোনটিই আপনাকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে পারত না। যতটা প্রভাবিত করলে সংকট দেখা দেয় এবং নাভিশ্বাস ওঠে। এরকম সংকট দেখা দিলে তেলের বিকল্প তো আর পানি হতে পারে না। তাই এখন আমরা জেনে নেই সয়াবিন তেলের কী কী কার্যকর বিকল্প রয়েছে।
সয়াবিন তেলের বিকল্পসমূহ
পাম ওয়েল
পাম ওয়েল (Pam Oil) সয়াবিন তেলের চেয়ে দাম কম পাম ওয়েলের। মূলত পাম তেল উৎপাদন খরচ কম তাই এর মূল্য কিছুটা কম হয়। শীতকালে এই তেল জমে যায় বিধায় অনেকে পছন্দ করে না। এটি যথেষ্ট স্বাস্থকর। খাবার রান্নায় এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। সারা বিশ্বে পাম তেল ব্যবহারের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে থাকে।
সরিষার তেল
সরিষার তেল (Mustard Oil) রান্নার জন্যে অল্প ব্যবহৃত হয় তবে গায়ে মাখা ও শরীর মালিশ করার কাজে এই তেল বেশি ব্যবহার হয়। সর্ষের তেলের ঝাঁঝের জন্যে সর্ষের তেলের রান্নার আলাদা বিশেষত্ব আছে। সর্ষে ইলিশ বেশ জনপ্রিয় বাংলাদেশে। মুড়িমাখায় সর্ষের তেল ব্যবহার করা হয়। আলু ভর্তায় সর্ষের তেল ব্যবহার করা হয়। সর্ষের তেল সর্ষের বীজ নিষ্পেষণ করে প্রস্তুত করা হয়। যদিও সর্ষের তেল সয়াবিন তেলের বিকল্প তবুও এটির দাম বেশি। কারণটি সম্ভবত অল্প পরিমাণে সরিষার দানার চাষ। যদি এটি বিকল্প হয় তাহলে সয়াবিন তেলের ওপর চাপ কমবে।
সূর্যমুখী তেল
সূর্যমুখী তেল (Sunflower Oil) রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। কাটাযুক্ত আশ্চর্য ছোট ফুলগাছ যা সূর্যের দিকে ঘুরে। এই গাছের বীজ থেকে হয় সূর্যমুখী তেল। এটিরও দাম নাগালের বাইরে। সয়াবিন তেলের চেয়ে কম নয়। তবে নিজেরা সূর্যমুখী চাষ করে তেল আহরণ করতে পারলে সয়াবিন তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে।
চাল তুষ তেল
চাল তুষ তেল (Rice Bran Oil) একটি ভোজ্য তেল। কম জনপ্রিয় কিন্তু বাংলাদেশে দাম বেশি। যদি এটি বেশি পরিমাণে উৎপাদন করা যায় তাহলে এর দাম কমবে। এটি সয়াবিন তেলের বাজারে ভারসাম্য রাখতে একটি সেরা বিকল্প হতে পারবে। কারণ ধান থেকে যে তুষ হয় তা থেকে এই তেল হয়। ধান চাষ সারাদেশে হয়েই থাকে।
জলপাই তেল
জলপাই তেল (Olive Oil) একটি ভোজ্য তেল। রান্নায় কম জনপ্রিয় কিন্তু বাংলাদেশে কিছু পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। সয়াবিন তেলের তুলনায় দাম বেশিই বটে। এর কারণ কম করে জলপাই তেল উৎপাদন। যদি এটি বেশি পরিমাণে উৎপাদন হয়। তাহলে দাম কমবে। এটি শরীরে মাখার কাজেও ব্যবহৃত হয়। জলিপাই বাংলাদেশে উৎপান করা হয়।
নারকেল তেল
বাংলাদেশে নারকেল তেল (Coconut Oil) চুলে মাখার একটি পণ্য, যা সরাসরি ত্বকে ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়। তবে প্রথমবার নারকেল তেল ত্বকে ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট বা পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে নিতে হবে। এছাড়া নারকেল তেল খাবার রান্নায় ব্যবহৃত হয়। ভারতে ভোজ্যতেল হিসেবে বেশ ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে তেমন দেখা যায় না। নারকেল ও ডাব খাওয়ার পাশাপাশি নারকেল তেল ভোজ্যতেল হলে এটি সয়াবিন তেলের দারুন বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বাড়িতেই নারকেল গাছ থাকে।
এভোকাডো তেল
এভোকাডো তেল (Avocado Oil) বাংলাদেশে প্রচলিত নয় একদমই। তবে এট ভোজ্যতেল হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবহার করা হয়। সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে এই তেলও বাজারে কিছু পরিমাণে থাকলে ভোজ্যতেলের কারসাজি কিছুটা কমানো সম্ভব। সেজন্য এভোকাডো চাষের ব্যবস্থাও করতে হবে।
বাদাম তেল
বাদাম তেল (Peanut Oil) বা চিনা বাদামের তেল আমেরিকা, চায়না, দক্ষিণ এশিয়া এবং সাউথ ইস্ট এশিয়ার অনেক দেশেই খুব ব্যবহৃত হয়। বাদামের তেলে কোলেস্টেরল থাকেনা। খাদ্যতালিকায় বাদামের তেল ব্যবহার করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেলের বিকল্প বাদাম তেল করা যায়। বাংলাদেশে চিনাবাদামের উৎপাদন আছে।
খাবারে অল্প তেল ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। তেল শুধু আমদানি নয় তেল উৎপাদনেও আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। উৎপাদিত তেল বীজ অল্প টাকায় ফড়িয়াদের নিকট বিক্রি করে দেওয়াও উচিত নয় বরং নিজেরা তেল বীজগুলো ভাঙ্গিয়ে নিয়ে তেল উৎপাদন ও স্থানীয়ভাবে সেগুলো শোধন বা রিফাইন করে ব্যবহারের জন্য ঘরে রেখে দেওয়া উচিত। যেন ভোজ্যতেলের দাম হঠাৎ করেই আকাশে কেউ উঠিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।